কন্টেন্ট রাইটিং কি । কন্টেন্ট রাইটিং করে আয় করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত  

Salim Mahamud

Updated on:

কন্টেন্ট রাইটিং কি । কন্টেন্ট রাইটিং করে আয় করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত  
কন্টেন্ট রাইটিং কি । কন্টেন্ট রাইটিং করে আয় করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত  

কন্টেন্ট রাইটিং কি । কন্টেন্ট রাইটিং করে আয় করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত  

আপনি অবশ্যই শুনেছেন Content Is King! জী হ্যাঁ কথাটি একেবারেই সত্যি। আপনি যেখানেই যান না কেনো আপনি কোনো না কোনো লিডিং কন্টেন্ট দেখতে পারবেনই। বিভিন্ন ধরণের কন্টেন্ট থাকলেও আমাদের কাছে সবচেয়ে বেশি সহজলভ্য ও গ্রহনযোগ্য হলো লিখিত কন্টেন্ট, যাকে আমরা আদর করে আর্টিকেল বলে থাকি। আপনি যে এটা এখন পড়ছেন এটাও একটা কন্টেন্ট, একটা লিখিত কন্টেন্ট। 

লিখিত কন্টেন্ট বা আর্টিকেল রাইটিং বা কন্টেন্ট রাইটিং, তা আপনি যাই বলে ডাকেন না কেনো এটা ছাড়া সব কিছুই অচল প্রায়। তবে আপনি কি সঠিক ভাবে জানেন কন্টেন্ট রাইটিং কি? আর আপনি কি এই বিষয়ে অবগত যে, কন্টেন্ট রাইটিং করে আয় করা যায়? একি, জানেন না? চিন্তা নেই। এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে একদম জেনে যাবেন। যথা সম্ভব সহজ সাবলীল ও সুন্দর ভাষায় উপস্থাপন করার চেষ্টা করবো প্রতিটা বিষয় যাতে করে আপনার বুজতে কোনো অসুবিধা না হয়। তাহলে আর কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক আমাদের এবারের “কন্টেন্ট রাইটিং” বিষয়ক আর্টিকেলটি।  

কন্টেন্ট (content) কি? কন্টেন্টের প্রকারভেদ 

কন্টেন্ট (content) হলো এমন কোনো বিষয়বস্ত যা কোনো মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। এটি হতে পারে লিখিত, অডিও, ভিডিও, ছবি, অথবা কোনো মিশ্র মাধ্যমের সংমিশ্রণ। কন্টেন্টের উদ্দেশ্য হতে পারে তথ্য প্রদান, বিনোদন প্রদান, বা কোনো উদ্দেশ্য অর্জন করা।

কন্টেন্টের প্রকারভেদ অনেক। কয়েকটি সাধারণ প্রকারভেদ হল:

  • লিখিত কন্টেন্ট: এটি হল সবচেয়ে প্রচলিত ধরণের কন্টেন্ট। এতে বই, নিবন্ধ, পোস্ট, ইমেল, চিঠি, ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত।
  • অডিও কন্টেন্ট: এতে গান, বই, বক্তৃতা, রেডিও অনুষ্ঠান, ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত।
  • ভিডিও কন্টেন্ট: এতে চলচ্চিত্র, টেলিভিশন অনুষ্ঠান, ইউটিউব ভিডিও, ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত।
  • ছবি কন্টেন্ট: এতে ফটো, গ্রাফিক্স, শিল্পকর্ম, ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত।
  • মিশ্র মিডিয়া কন্টেন্ট: এতে বিভিন্ন ধরণের মিডিয়া একত্রিত করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, একটি ওয়েবসাইটে লিখিত, অডিও, ভিডিও, এবং ছবি কন্টেন্ট থাকতে পারে।

কন্টেন্টের প্রকারভেদ নির্ভর করে এর উদ্দেশ্য, মাধ্যম, এবং শ্রোতাদের উপর। উদাহরণস্বরূপ, একটি শিক্ষামূলক ওয়েবসাইটে তথ্য প্রদানের জন্য লিখিত কন্টেন্ট ব্যবহার করা যেতে পারে। একটি বিনোদনমূলক ওয়েবসাইটে ভিডিও কন্টেন্ট ব্যবহার করা যেতে পারে। একটি ব্যবসায়িক ওয়েবসাইটে লিখিত এবং ভিডিও কন্টেন্ট ব্যবহার করা যেতে পারে।

কন্টেন্ট রাইটিং কি? এটা বলতে কি বুঝায়?

বাংলায় “কন্টেন্ট রাইটিং” মানে হল “আর্টিকেল লেখা”। এটি এমন একটি লেখার প্রক্রিয়া যাতে কোনও নির্দিষ্ট বিষয় বা উদ্দেশ্যকে কেন্দ্র করে তথ্যপূর্ণ ও আকর্ষণীয় উপায়ে লেখা হয়। এই আর্টিকেল বা কন্টেন্ট বিভিন্ন ধরণের হতে পারে। পরবর্তী স্টেপে আমরা জানাবো কন্টেন্ট রাইটিং এর প্রকারভেদ সম্পর্কে। সেখানে মূলত সম্পূর্ণ  ধারণাটি পেয়ে যাবেন। 

কন্টেন্ট রাইটিং একটি গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা যা বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি ব্যবসা, শিক্ষা, সরকার, এবং অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। কন্টেন্ট রাইটিংয়ের মূল লক্ষ্য হল একটি নির্দিষ্ট শ্রোতার কাছে তথ্য প্রদান করা, তাদেরকে বিনোদন দেওয়া বা তাদেরকে কোনও নির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতে উৎসাহিত করা। 

কন্টেন্ট রাইটারদের অবশ্যই তাদের শ্রোতারদের প্রয়োজনীয়তা এবং আগ্রহগুলি বুঝতে হবে এবং তাদের লেখাকে সেইভাবে উপস্থাপন করতে হবে। আচ্ছা এবার চলুন জেনে নেয়া যাক কন্টেন্ট এর প্রকাভেদ বা কন্টেন্ট রাইটিং এর প্রকারভেদ সম্পর্কে। 

কন্টেন্ট রাইটিং কত প্রকার ও কি কি? 

কন্টেন্ট রাইটিং ঠিক কত প্রকার সেটা স্পেসিফিক ভাবে বলাটা কিছুটা কঠিন কেননা এর রয়েছে অনেক গুলো শাখা প্রশাখা, তবে প্রাথমিক ভাবে সে সেক্টর গুলোতে কন্টেন্ট রাইটিং এর সাথে যুক্ত সেগুলো উপস্থাপন করছি: 

ব্লগ রাইটিং 

ব্লগ রাইটিং হল এক ধরনের লেখালেখির কাজ যা একটি ব্লগে প্রকাশ করা হয়। ব্লগ হল একটি ওয়েবসাইট বা ওয়েবপোর্টাল যেখানে একজন ব্যক্তি বা একটি দল নিয়মিত নতুন আর্টিকেল বা পোস্ট প্রকাশ করে। এই পোস্টগুলি বিভিন্ন বিষয়ের উপর হতে পারে, যেমন ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, বর্তমান ঘটনা, প্রযুক্তি, ব্যবসা, বা অন্য যেকোনো বিষয়।

আপনি যদি ব্লগ এবং ব্লগিং বিষয়ক বিষয়ে জানতে আগ্রহী হয়ে থাকেন তবে এখানে ক্লিক করুন। 

ইমেইল রাইটিং

ইমেইল রাইটিং হলো ইমেইল লেখার কৌশল। ইমেইল হলো একটি ইলেক্ট্রিক চিঠি যা ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রেরণ করা হয়। ইমেইল রাইটিংয়ের উদ্দেশ্য হলো স্পষ্ট, সংক্ষিপ্ত এবং পেশাদার ভাষায় ইমেইল লিখতে পারা।

ইমেইল রাইটিংয়ের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো:

  • বিষয় লাইন (Subject Line): ইমেইলের বিষয় লাইন অবশ্যই সংক্ষিপ্ত এবং সুনির্দিষ্ট হওয়া উচিত। এটি ইমেইলের বিষয়বস্তু সম্পর্কে প্রাপককে অবহিত করতে সাহায্য করে।
  • শুভেচ্ছা (Salutation): ইমেইলের শুভেচ্ছা প্রাপককে সম্মান জানাতে সাহায্য করে। ব্যক্তিগত ইমেইলে সাধারণত নাম ব্যবহার করা হয়, তবে পেশাদার ইমেইলে পদবি ব্যবহার করা হয়।
  • মূল অংশ (Body): ইমেইলের মূল অংশে বিষয়বস্তু সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। ইমেইলটি স্পষ্ট, সংক্ষিপ্ত এবং পেশাদার ভাষায় লেখা উচিত।
  • বিনতি (Closing): ইমেইলের বিনতি প্রাপককে ইমেইলটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ জানাতে সাহায্য করে। ব্যক্তিগত ইমেইলে সাধারণত “ধন্যবাদ” ব্যবহার করা হয়, তবে পেশাদার ইমেইলে “ধন্যবাদান্তে” ব্যবহার করা হয়।
  • সাইনঅফ (Signature): ইমেইলের সাইনঅফে আপনার নাম, পদবি, প্রতিষ্ঠানের নাম এবং যোগাযোগের তথ্য দেওয়া যেতে পারে।

একজন কন্টেন্ট রাইটার এর কাজ হলো এসকল বিষয়ের সমন্বয়ে পার্ফেক্ট ইমেইল তৈরি করা। 

কপিরাইটিং 

কপিরাইটিং হলো এমন একটি লেখার কৌশল যা পণ্য বা পরিষেবার প্রচার এবং বিপণনের জন্য ব্যবহৃত হয়। কপিরাইটাররা তাদের লেখার দক্ষতা ব্যবহার করে পাঠকদের মনোযোগ আকর্ষণ করে, তাদের আগ্রহ জাগিয়ে তোলে এবং তাদের পণ্য বা পরিষেবা কেনার জন্য প্ররোচিত করে।

কপিরাইটিং বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, যেমন:

  • বিজ্ঞাপন, ব্রোশার, বা অন্যান্য বিজ্ঞাপনী সামগ্রীর জন্য ব্যবহৃত লেখা।
  • ওয়েবসাইট, সোশ্যাল মিডিয়া, বা অন্যান্য অনলাইন প্ল্যাটফর্মের জন্য ব্যবহৃত লেখা।
  • পণ্য বা পরিষেবার ব্যবহার, ইনস্টলেশন, বা মেরামত সম্পর্কে তথ্য প্রদানকারী লেখা।
  • গল্প, কবিতা, বা অন্যান্য সৃজনশীল লেখা যা পণ্য বা পরিষেবার সাথে সম্পর্কিত।

টেকনিকাল রাইটিং

টেকনিক্যাল রাইটিং হল এমন একটি লেখার ধরন যেখানে কোনও জটিল বা প্রযুক্তিগত বিষয়কে সহজ, সুস্পষ্ট এবং সংক্ষিপ্ত ভাষায় প্রকাশ করা হয়। এটি এমন একটি লেখার ধরন যা নির্দিষ্ট দর্শকদের জন্য লেখা হয়, যারা প্রযুক্তিগত বিষয়ে জ্ঞান রাখে বা বিষয়টি সম্পর্কে জানতে আগ্রহী।

টেকনিক্যাল রাইটিংয়ের উদ্দেশ্য হল পাঠককে বিষয়টি বুঝতে সাহায্য করা। এটি পাঠককে বিষয়টি সম্পর্কে সঠিক তথ্য প্রদান করে, এবং বিষয়টিকে সহজ এবং বোধগম্য ভাষায় প্রকাশ করে।

এড এন্ড প্রোমো রাইটিং 

এড এন্ড প্রোমো রাইটিং হল এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে কোনও পণ্য বা পরিষেবা সম্পর্কে তথ্য প্রচার করা হয়। এটি সাধারণত বিজ্ঞাপন, প্রচারণা এবং অন্যান্য মার্কেটিং সামগ্রীতে ব্যবহৃত হয়।

এড এন্ড প্রোমো রাইটিং-এর মূল লক্ষ্য হল সম্ভাব্য গ্রাহকদের পণ্য বা পরিষেবার প্রতি আগ্রহী করা এবং তাদের ক্রয় করতে উৎসাহিত করা। এটি করার জন্য, এড এন্ড প্রোমো রাইটাররা সাধারণত নিম্নলিখিত কৌশলগুলি ব্যবহার করে:

  • পণ্য বা সেবার ফিচার্স এবং সুবিধাগুলি তুলে ধরা।
  • পণ্যটি কেন কেনা উচিত তা ব্যাখ্যা করা।
  • কেনার জন্য একটি জরুরি প্রয়োজনীয়তা বা সুযোগ তৈরি সৃষ্টি।

সোশাল মিডিয়া পোস্ট রাইটিং 

সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট রাইটিং হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে কোনও নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য অর্জনের জন্য সোশ্যাল মিডিয়ার প্ল্যাটফর্মগুলিতে পোস্ট লেখা হয়। এই পোস্টগুলিতে বিভিন্ন ধরনের টেক্সট, ছবি, ভিডিও এর মাধ্যমে তথ্য, ধারণা, বা আবেগ প্রকাশ করা যেতে পারে। সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট রাইটিং-এর মূল উদ্দেশ্য হলো লক্ষ্যবস্তু দর্শকদের কাছে পৌঁছাতে এবং তাদের সাথে সংযোগ স্থাপন করা। সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট রাইটিং একটি গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা, কারণ এটি ব্যক্তিগত, ব্যবসায়িক, বা সাংস্কৃতিক বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়।

স্ক্রিপ্ট রাইটিং 

স্ক্রিপ্ট রাইটিং হলো ফিচার ফিল্ম, টেলিভিশন প্রোডাকশন বা ভিডিও গেমের মতো গণমাধ্যমের জন্য স্ক্রিপ্ট লেখার কাজ। এটি একটি ফ্রিল্যান্স পেশা।

মূলত স্ক্রিপ্ট রাইটাররা একটি গল্পের কাঠামো তৈরি করেন, চরিত্র তৈরি করেন, সংলাপ লিখেন এবং দৃশ্যের বর্ণনা দেন। তারা গল্পটিকে এমনভাবে উপস্থাপন করেন যা দর্শকদের আগ্রহী এবং উত্তেজিত করে তোলে।

স্ক্রিপ্ট রাইটিং একটি কঠিন এবং চ্যালেঞ্জিং কাজ। এটি সৃজনশীলতা, কল্পনাশক্তি এবং গল্প বলার ক্ষমতা প্রয়োজন। স্ক্রিপ্ট রাইটারদের অবশ্যই গণমাধ্যমের প্রযুক্তি এবং শিল্প সম্পর্কেও জানতে হবে।

লং ফরম কন্টেন্ট রাইটিং 

লং ফরম কন্টেন্ট রাইটিং হল এমন একটি কন্টেন্ট রাইটিং পদ্ধতি যেখানে 1,000 শব্দেরও বেশি দীর্ঘ একটি লেখা তৈরি করা হয়। এই ধরনের লেখাগুলি সাধারণত একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর গভীরভাবে বিশ্লেষণ করে এবং পাঠকের কাছে মূল্যবান তথ্য প্রদান করে। 

লং ফরম কন্টেন্ট রাইটিংয়ের অনেক সুবিধা রয়েছে। এটি পাঠকদের একটি নির্দিষ্ট বিষয় সম্পর্কে গভীরভাবে বুঝতে সাহায্য করতে পারে। এটি পাঠকের সাথে একটি সম্পর্ক তৈরি করতে এবং তাদের বিশ্বাস অর্জন করতে সাহায্য করতে পারে। এটি একটি ওয়েবসাইটের ট্রাফিক বাড়ানো এবং সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (SEO) উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে।

গোস্ট রাইটিং 

বাংলায় গোস্ট রাইটারকে “অদৃশ্য লেখক” বলা হয়। গোস্ট রাইটিং হলো একটি রচনামূলক কাজ যেখানে একজন লেখক অন্য ব্যক্তির নামে লিখেন এবং তার পরিচয় গোপন রাখেন। গোস্ট রাইটাররা বিভিন্ন ধরনের কাজ করতে পারেন, যেমন বই, নিবন্ধ, স্ক্রিপ্ট, বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপন, এমনকি ব্যক্তিগত চিঠিও।

গোস্ট রাইটিংয়ের অনেক সুবিধা রয়েছে। এটি একজন লেখকের জন্য তার দক্ষতা এবং জ্ঞান ব্যবহার করে অর্থ উপার্জন করার একটি দুর্দান্ত উপায়। এটি একজন ব্যক্তির জন্য তার ধারণাগুলিকে প্রকাশ করার এবং তার লক্ষ্য শ্রোতার কাছে পৌঁছানোর একটি উপায়।

গোস্ট রাইটিংয়ের কিছু অসুবিধাও রয়েছে। এটি একজন লেখকের জন্য তার কাজের স্বীকৃতি পাওয়ার সুযোগকে সীমিত করে। এটি একজন ব্যক্তির জন্য তার লেখার দক্ষতা উন্নত করার সুযোগকেও সীমিত করে। 

একাডেমিক কন্টেন্ট রাইটিং 

একাডেমিক কন্টেন্ট রাইটিং হল এমন এক ধরনের লেখালিখি যা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত হয়। এটি সাধারণত গবেষণাপত্র, থিসিস, প্রবন্ধ, নিবন্ধ, রিপোর্ট, প্রেজেন্টেশন ইত্যাদির মতো ফর্ম্যাটে লেখা হয়। একাডেমিক কন্টেন্ট রাইটিং এর উদ্দেশ্য হল একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে তথ্য সরবরাহ করা, একটি যুক্তি উপস্থাপন করা, বা একটি সমস্যার সমাধান করা। 

প্রোডাক্ট ডেসক্রিপশান রাইটিং

প্রোডাক্ট ডেসক্রিপশান রাইটিং হল এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে কোনও পণ্যের বৈশিষ্ট্য, সুবিধা এবং কার্যকারিতাগুলিকে একটি আকর্ষক এবং তথ্যপূর্ণ উপায়ে বর্ণনা করা হয়। প্রোডাক্ট ডেসক্রিপশনগুলি সাধারণত পণ্যের ওয়েবসাইট, বিপণন সামগ্রী এবং বিক্রয় প্রস্তাবনাগুলিতে পাওয়া যায়।

একটি ভাল প্রোডাক্ট ডেসক্রিপশনের লক্ষ্য হল পণ্যটি সম্পর্কে সম্ভাব্য গ্রাহকদের কাছে একটি স্পষ্ট এবং সংক্ষিপ্ত ধারণা প্রদান করা। এটি পণ্যের মূল বৈশিষ্ট্যগুলি তুলে ধরতে হবে এবং সম্ভাব্য গ্রাহকদের জন্য কীভাবে এটি উপকারী হতে পারে তা ব্যাখ্যা করতে হবে।

প্রুফরিডিং ও এডিটিং

প্রুফরিডিং হল লেখালেখির ভুলত্রুটি ত্রুটিহীন করার একটি প্রক্রিয়া। প্রুফরিডাররা লেখার ভুল বানান, ব্যাকরণ, কাল, এবং যতিচিহ্নের ত্রুটি খুঁজে বের করে। তারা লেখার ধারাবাহিকতা, যুক্তিসঙ্গততা, এবং নির্ভুলতাও যাচাই করে।

এডিটিং হল লেখালেখির সামগ্রী, গঠন, এবং শৈলীর উন্নতি করার একটি প্রক্রিয়া। এডিটররা লেখার বিষয়বস্তু, স্পষ্টতা, এবং সংক্ষিপ্ততা নিয়ে কাজ করে। তারা লেখার গঠন, শব্দচয়ন, এবং বাক্যগঠন উন্নত করে।

উভয়ই খুব গুরুত্বপূর্ণ কন্টেন্ট তৈরি ও লেখার ক্ষেত্রে। 

রি-রাইটিং

রি-রাইটিং হলো একটি প্রক্রিয়া যেখানে একটি লেখা পুনরায় লেখা হয়, মূল তথ্য এবং বার্তা অপরিবর্তিত রেখে। রি-রাইটিংয়ের লক্ষ্য হলো লেখাটিকে আরও স্পষ্ট, সংক্ষিপ্ত, আকর্ষণীয় বা সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজড (SEO) করা। 

রি-রাইটিংয়ের জন্য, একজন লেখককে মূল লেখাটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পড়তে হবে এবং এর অর্থ এবং বার্তা বুঝতে হবে। তারপর, তিনি মূল লেখাটিকে পুনর্গঠন করতে পারেন, নতুন শব্দ বা বাক্যাংশ ব্যবহার করতে পারেন, বা লেখাটিকে আরও সহজ বা সংক্ষিপ্ত করতে পারেন।

প্রেস রিলিজ রাইটিং

প্রেস রিলিজ রাইটিং হল একটি নির্দিষ্ট বিষয়বস্তু সম্পর্কে সাংবাদিকদের অবহিত করার জন্য একটি লিখিত বিবৃতি তৈরি করা। এটি সাধারণত সংবাদের একটি ঘটনা বা উদ্যোগ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণ প্রদান করে। প্রেস রিলিজগুলি প্রায়শই ব্যবসা, সরকার এবং অন্যান্য সংস্থাগুলি দ্বারা প্রকাশ করা হয়।

প্রেস রিলিজ রাইটিং হল একটি গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা যা যেকোনো ব্যক্তির জন্য উপকারী হতে পারে যিনি জনসাধারণের সাথে যোগাযোগ করতে চান। এটি আপনাকে আপনার বার্তা স্পষ্ট এবং সংক্ষিপ্তভাবে যোগাযোগ করতে সাহায্য করতে পারে, যা সাংবাদিকদের আপনার প্রতি আগ্রহী করে তুলতে পারে।

কন্টেন্ট রাইটার হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা 

কন্টেন্ট রাইটার হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতাগুলিকে প্রধানত তিনটি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে:

  • ভাষাগত দক্ষতা
  • সৃজনশীল চিন্তার দক্ষতা
  • বিষয়গত জ্ঞান

ভাষাগত দক্ষতা

কন্টেন্ট রাইটারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যোগ্যতা হল ভাষাগত দক্ষতা। একজন ভালো কন্টেন্ট রাইটারের অবশ্যই বাংলা ভাষার সমস্ত দিক সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে। তার অবশ্যই বানান, ব্যাকরণ, শব্দভাণ্ডার, এবং রচনাশৈলী সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকতে হবে। এছাড়াও, তিনি ইংরেজি ভাষারও ভালো দখল রাখতে হবে। কারণ, বর্তমান বিশ্বে বেশিরভাগ কন্টেন্ট ইংরেজিতে লেখা হয়।

সৃজনশীল চিন্তার দক্ষতা

কন্টেন্ট রাইটারের অবশ্যই সৃজনশীল চিন্তার দক্ষতা থাকতে হবে। তার অবশ্যই নতুন ধারণা তৈরি করার এবং সেগুলিকে আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করার ক্ষমতা থাকতে হবে। তিনি অবশ্যই তার পাঠকদের মনোযোগ ধরে রাখার জন্য সৃজনশীল উপায় খুঁজে বের করতে হবে।

বিষয়গত জ্ঞান

কন্টেন্ট রাইটারের অবশ্যই যে বিষয়ে তিনি লিখছেন সে বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকতে হবে। তার অবশ্যই সেই বিষয়ের সমস্ত প্রাসঙ্গিক তথ্য জানতে হবে। এছাড়াও, তিনি সেই বিষয়ের সর্বশেষ খবর এবং ট্রেন্ড সম্পর্কে অবগত থাকতে হবে।

নিয়মিত লেখার অভ্যাস

কন্টেন্ট রাইটারকে নিয়মিত লেখার অভ্যাস থাকতে হবে। এর অর্থ হল নিয়মিত লেখালেখি করা এবং লেখালেখির মাধ্যমে নিজের দক্ষতা উন্নত করা। কন্টেন্ট রাইটারকে বিভিন্ন ধরনের লেখা তৈরি করতে হয়, তাই তার মধ্যে নিয়মিত লেখার অভ্যাস থাকা প্রয়োজন।

ক্রিয়েটিভ লেখার দক্ষতা

কন্টেন্ট রাইটারকে ক্রিয়েটিভ লেখার দক্ষতা থাকতে হবে। এর অর্থ হল লেখার মধ্যে নতুনত্ব এবং আকর্ষণীয়তা তৈরি করা। কন্টেন্ট রাইটারকে বিভিন্ন ধরনের লেখা তৈরি করতে হয়, তাই তার মধ্যে ক্রিয়েটিভ লেখার দক্ষতা থাকা প্রয়োজন।

এছাড়াও, একজন ভালো কন্টেন্ট রাইটারের অবশ্যই নিম্নলিখিত দক্ষতাগুলি থাকতে হবে:

  • গবেষণা করার দক্ষতা
  • সময়ের মধ্যে কাজ করার দক্ষতা
  • সমস্যা সমাধান করার দক্ষতা
  • দলবদ্ধভাবে কাজ করার দক্ষতা

কন্টেন্ট রাইটার হওয়ার জন্য কোনো নির্দিষ্ট শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রয়োজন হয় না। তবে, কন্টেন্ট রাইটিংয়ের উপরে কোনো ডিপ্লোমা বা স্নাতক ডিগ্রি থাকলে তা আপনার চাকরির সুযোগ বাড়াতে পারে।

কন্টেন্ট রাইটার হওয়ার জন্য আপনাকে অবশ্যই লেখালেখির প্রতি ভালোবাসা থাকতে হবে। আপনাকে অবশ্যই নিয়মিত অনুশীলন করতে হবে এবং আপনার দক্ষতা উন্নত করতে হবে। এছাড়াও, আপনাকে অবশ্যই বর্তমান প্রবণতা সম্পর্কে অবগত থাকতে হবে।

এগুলো ছাড়াও একজন কন্টেন্ট রাইটারকে অবশ্যই কম্পিউটার টাইপিং স্কিলের উপর বেশ দক্ষ হতে হবে এবং যেকোনো তথ্য দ্রুততম সময়ের মধ্যে সংগ্রহ করার মত দক্ষতা রাখতে হবে। 

কন্টেন্ট রাইটিং শেখার উপায় 

আপনি ততক্ষন অব্দি একজন ভালো লেখক হতে পারবেন না, যতক্ষন না অব্দি একজন ভালো পাঠক হয়ে উঠছেন। একজন ভালো কন্টেন্ট রাইটার হওয়ার প্রথম শর্ত হলো আপনাকে প্রচুর পরিমাণ অন্যের লেখা পড়তে হবে। পড়ার মাধ্যমেই আপনার ভেতর প্রাথমিক পর্যায়ের লেখার ধরণ আয়ত্তে আসবে। 

এরপর আপনাকে জানতে হবে একেক ধরণের আর্টিকেল লেখার স্ট্যাকচার, যা আপনাকে উন্নত মানের কন্টেন্ট তৈরি করতে সহায়তা করবে। আপনি অবশ্যই এক্ষেত্রে বিভিন্ন কন্টেন্ট রাইটিং কোর্সের শরণাপন্ন হতে পারেন। বর্তমানে অনলাইনেও অনেক ফ্রী এবং পেইড কোর্স রয়েছে কন্টেন্ট রাইটিং বিষয়ক। সেখানে আপনি কন্টেন্ট রাইটিং বিষয়ক সকল খুঁটিনাটি সম্পর্কে জানতে পারবেন। 

আর সর্বোপরি হলো প্র্যাক্টিস, Remember – Practise makes a man perfect. আপনি যদি দারুন একজন কন্টেন্ট রাইটার হতে চান তবে অবশ্যই আপনাকে লেখার প্র্যাক্টিস করতে হবে প্রতিনিয়ত। আচ্ছা এই পর্যায়ে কিছু প্রো টিপস জানাচ্ছি যা কন্টেন্ট রাইটিং এর কাজে আপনার হেল্প করবে।  

কন্টেন্ট রাইটিং টিপস 

১) আপনার পাঠকদের চিন্তা করুন। আপনার লেখার উদ্দেশ্য কী? আপনি তাদের কী শিখতে বা করতে উত্সাহিত করতে চান? আপনার পাঠকদের চাহিদা এবং আগ্রহগুলি বোঝার মাধ্যমে, আপনি আপনার লেখাকে তাদের জন্য আরও আকর্ষক এবং তথ্যপূর্ণ করে তুলতে পারেন।

২) আপনি যে বিষয়ে লিখছেন তা সম্পর্কে যতটা সম্ভব জানুন। এটি আপনাকে সঠিক তথ্য প্রদান করতে এবং আপনার লেখাকে আরও বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে সহায়তা করবে।

৩) আপনি আপনার লেখার মাধ্যমে কী অর্জন করতে চান? আপনি তথ্য প্রদান করতে চান? একটি পণ্য বা পরিষেবা বিক্রি করতে চান? একটি আবেগকে জাগিয়ে তুলতে চান? আপনার উদ্দেশ্য যত স্পষ্ট হবে, আপনার লেখা তত কার্যকর হবে।

৪) আপনার লেখার উপর আপনার পাঠকদের মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করুন। তাদের ভাষা ব্যবহার করুন এবং তাদের আগ্রহের বিষয়গুলি কভার করুন। আপনার লেখার মাধ্যমে তাদের সাথে একটি সংযোগ তৈরি করার চেষ্টা করুন। 

৫) সহজ ভাষা ব্যবহার করুন। আপনার লেখার ভাষা আপনার পাঠকদের জন্য বোধগম্য হওয়া উচিত। জটিল শব্দ এবং বাক্যাংশ এড়িয়ে চলুন। সংক্ষিপ্ত, সহজ বাক্যে লিখুন। 

৬) আপনার লেখাকে পুনরায় পড়ুন এবং সম্পাদনা করুন। আপনার লেখার জন্য সময় নিন এবং এটি পুনরায় পড়ুন এবং সম্পাদনা করুন। বানান এবং ব্যাকরণগত ভুলগুলি ধরুন এবং আপনার লেখাটিকে আরও মসৃণ এবং প্রবাহিত করে তোলার জন্য পরিবর্তন করুন। 

কন্টেন্ট রাইটিং করে কিভাবে আয় করা যায়?

ব্লগিং 

ব্লগিং বর্তমানে একটি জনপ্রিয় অনলাইন ক্যারিয়ার। ব্লগিং করে আয় করার বিভিন্ন উপায় রয়েছে। এর মধ্যে একটি হল কন্টেন্ট রাইটিং। কন্টেন্ট রাইটিং হল ব্লগে বিভিন্ন বিষয়ের উপর লেখালেখি করা। ভালো মানের কন্টেন্ট রাইটারদের চাহিদা সবসময়ই থাকে। তাই ব্লগিং করে কন্টেন্ট রাইটিং এর মাধ্যমে আয় করা সম্ভব।

ব্লগিং করে কন্টেন্ট রাইটিং এর মাধ্যমে আয় করার জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি অনুসরণ করতে হবে:

১. একটি ব্লগ তৈরি করুন

ব্লগিং করে কন্টেন্ট রাইটিং এর মাধ্যমে আয় করার জন্য প্রথমেই একটি ব্লগ তৈরি করতে হবে। ব্লগ তৈরি করতে বিভিন্ন ওয়েবসাইট রয়েছে। যেমন: WordPress, Blogger, Tumblr, Wix ইত্যাদি। আপনি আপনার পছন্দমতো যেকোনো ওয়েবসাইট ব্যবহার করে একটি ব্লগ তৈরি করতে পারেন।

২. আপনার ব্লগের বিষয়বস্তু নির্বাচন করুন

ব্লগের বিষয়বস্তু নির্বাচন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনার লেখার দক্ষতা এবং আগ্রহের উপর ভিত্তি করে আপনার ব্লগের বিষয়বস্তু নির্বাচন করুন। আপনি যে বিষয়ে ভালো লিখতে পারেন এবং যে বিষয়ে আপনার আগ্রহ রয়েছে সে বিষয়ে ব্লগ লিখুন।

৩. আপনার ব্লগের জন্য ভালো মানের কন্টেন্ট লিখুন

ব্লগের জন্য ভালো মানের কন্টেন্ট লিখতে হবে। আপনার লেখা কন্টেন্ট তথ্যবহুল, আকর্ষণীয় এবং পাঠকের জন্য উপকারী হতে হবে। আপনার লেখা কন্টেন্টে যথাযথ রিসার্চ এবং তথ্য থাকা উচিত।

৪. আপনার ব্লগকে প্রচার করুন

আপনার ব্লগকে প্রচার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনার ব্লগকে মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে বিভিন্ন উপায়ে প্রচার করতে পারেন। যেমন: সোশ্যাল মিডিয়া, ইমেইল, লিঙ্ক বিনিময় ইত্যাদি।

৫. আপনার ব্লগে বিজ্ঞাপন দিন

আপনার ব্লগে বিজ্ঞাপন দিলে আপনি আয় করতে পারবেন। Google AdSense হল একটি জনপ্রিয় বিজ্ঞাপন নেটওয়ার্ক। Google AdSense এর মাধ্যমে আপনার ব্লগে বিজ্ঞাপন দিতে পারেন।

৬. অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করুন

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং হল একটি জনপ্রিয় অনলাইন মার্কেটিং পদ্ধতি। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর মাধ্যমে আপনি বিভিন্ন পণ্য বা পরিষেবা বিক্রি করে কমিশন পাবেন। আপনার ব্লগে বিভিন্ন পণ্য বা পরিষেবার অ্যাফিলিয়েট লিঙ্ক যুক্ত করে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করতে পারেন।

৭. সরাসরি ক্লায়েন্টদের জন্য কাজ করুন

আপনি যদি ভালো মানের কন্টেন্ট রাইটার হন তবে সরাসরি ক্লায়েন্টদের জন্য কাজ করতে পারেন। বিভিন্ন ওয়েবসাইট এবং সংস্থা কন্টেন্ট রাইটারদের খুঁজে থাকে। আপনি এই ওয়েবসাইট এবং সংস্থাগুলিতে আপনার কন্টেন্ট রাইটিং দক্ষতা প্রদর্শন করে কাজ পেতে পারেন।

ব্লগিং করে কন্টেন্ট রাইটিং এর মাধ্যমে আয় করার জন্য ধৈর্য এবং পরিশ্রম প্রয়োজন। ভালো মানের কন্টেন্ট লিখতে পারলে এবং আপনার ব্লগকে প্রচার করতে পারলে আপনি ভালো পরিমাণে আয় করতে পারবেন।

ফ্রিল্যান্সিং 

কন্টেন্ট রাইটিং হল একটি জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং পেশা। এই পেশায় ভালো আয় করা সম্ভব হলেও, এর জন্য প্রয়োজন ভালো দক্ষতা ও প্রচেষ্টা।

কন্টেন্ট রাইটিং করে ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে আয় করার জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করা যেতে পারে:

১. দক্ষতা অর্জন

কন্টেন্ট রাইটিং এর জন্য ভালো দক্ষতা অর্জন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য প্রয়োজন ভালো লেখার দক্ষতা, গবেষণা করার দক্ষতা, এবং সৃজনশীলতার দক্ষতা।

লেখার দক্ষতা অর্জনের জন্য নিয়মিত পড়াশোনা করা, লেখালেখি করা, এবং লেখার বিষয়ে বিভিন্ন টিপস ও কৌশল শিখতে হবে। গবেষণা করার দক্ষতা অর্জনের জন্য বিভিন্ন তথ্য ও উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে হবে এবং সেগুলোকে সাজিয়ে উপস্থাপন করতে হবে। সৃজনশীলতার দক্ষতা অর্জনের জন্য বিভিন্ন বিষয় নিয়ে চিন্তাভাবনা করতে হবে এবং নতুন নতুন ধারণা তৈরি করতে হবে।

২. টার্গেট মার্কেট নির্ধারণ

কন্টেন্ট রাইটিং এর মাধ্যমে আয় করার জন্য টার্গেট মার্কেট নির্ধারণ করা গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ, আপনি কোন বিষয়ের উপর লেখালেখি করতে চান এবং কোন ধরনের ক্লায়েন্টদের কাছে আপনার লেখা পৌঁছে দিতে চান, সেটি আগে থেকেই স্থির করে নিতে হবে।

আপনি যদি কোন নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর দক্ষ হন, তাহলে সে বিষয়ের উপর লেখালেখি করার জন্য টার্গেট মার্কেট নির্ধারণ করা সহজ হবে। তবে, আপনি যদি বিভিন্ন বিষয়ের উপর লেখালেখি করতে আগ্রহী হন, তাহলে আপনার আগ্রহের বিষয়গুলোর উপর টার্গেট মার্কেট নির্ধারণ করতে পারেন।

৩. পোর্টফোলিও তৈরি

কন্টেন্ট রাইটিং এর মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য পোর্টফোলিও তৈরি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পোর্টফোলিও হল আপনার লেখালেখির দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার প্রমাণ।

আপনার লেখা বিভিন্ন লেখার নমুনা পোর্টফোলিওতে যুক্ত করতে পারেন। এছাড়াও, আপনি আপনার লেখালেখির জন্য প্রাপ্ত কোনো পুরস্কার বা স্বীকৃতিও পোর্টফোলিওতে যুক্ত করতে পারেন।

৪. মার্কেটিং

কন্টেন্ট রাইটার হিসেবে ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য মার্কেটিং করা গুরুত্বপূর্ণ। মার্কেটিং এর মাধ্যমে আপনি আপনার লেখার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা সম্পর্কে ক্লায়েন্টদের জানানোর সুযোগ পাবেন।

মার্কেটিং এর জন্য বিভিন্ন উপায় ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন, সোশ্যাল মিডিয়া, অনলাইন ফোরাম, এবং বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্ম।

৫. ক্লায়েন্ট খুঁজে বের করা

মার্কেটিং এর মাধ্যমে ক্লায়েন্ট খুঁজে বের করা যেতে পারে। এছাড়াও, বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মে ক্লায়েন্টদের জন্য দরপত্র জমা দেওয়া যেতে পারে।

ক্লায়েন্ট খুঁজে বের করার সময় ক্লায়েন্টের চাহিদা ও আপনার দক্ষতার মিল রয়েছে কিনা, সেটি খেয়াল রাখতে হবে।

৬. কাজের মান নিশ্চিত করা

ক্লায়েন্টদের সন্তুষ্ট করার জন্য কাজের মান নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কাজের সময় নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করা, কাজের মান ভালো রাখা, এবং ক্লায়েন্টের চাহিদা পূরণ করা উচিত।

৭. ফিডব্যাক গ্রহণ

ক্লায়েন্টদের কাছ থেকে ফিডব্যাক গ্রহণ করা উচিত। ফিডব্যাকের মাধ্যমে আপনি আপনার কাজের উন্নতি করতে পারবেন।

উপরোক্ত পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করে আপনি কন্টেন্ট রাইটিং করে ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে ভালো আয় করতে পারবেন। 

Note: পরের ধাপে কোথায় কন্টেন্ট রাইটিং এর কাজ খুজে পাবেন সে বিষয়ে জানানো রয়েছে। 

জব 

কন্টেন্ট রাইটিং হলো কোনো বিষয় সম্পর্কে তথ্যপূর্ণ এবং আকর্ষণীয়ভাবে লেখালেখি করা। বর্তমানে কন্টেন্ট রাইটিং একটি জনপ্রিয় পেশা। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সংস্থা, ওয়েবসাইট, ব্লগ, ইত্যাদি তাদের প্রয়োজনীয় বিষয়বস্তু তৈরির জন্য কন্টেন্ট রাইটারদের নিয়োগ দেয়।

কন্টেন্ট রাইটার হিসেবে চাকরি পেতে হলে প্রথমেই আপনার কন্টেন্ট রাইটিং দক্ষতা উন্নত করতে হবে। এজন্য আপনি অনলাইনে বিভিন্ন কোর্স করতে পারেন। এছাড়াও, আপনি বিভিন্ন বই ও ম্যাগাজিন পড়ে আপনার জ্ঞান ও দক্ষতা উন্নত করতে পারেন।

কন্টেন্ট রাইটার হিসেবে চাকরি পাওয়ার জন্য আপনার CV ও কভার লেটার ভালোভাবে তৈরি করতে হবে। এছাড়াও, আপনি আপনার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রোফাইলগুলোতে আপনার লেখালেখির নমুনা প্রকাশ করতে পারেন।

কন্টেন্ট রাইটার হিসেবে চাকরি পাওয়ার জন্য আপনি বিভিন্ন অনলাইন মার্কেটপ্লেস ও চাকরির ওয়েবসাইটে আবেদন করতে পারেন। এছাড়াও, আপনি সরাসরি প্রতিষ্ঠানগুলোতে যোগাযোগ করে আবেদন করতে পারেন।

এজেন্সি 

উপরের কোনো পদ্ধতি যদি আপনার পছন্দ না হয়ে থাকে এবং আপনি চান কন্টেন্ট রাইটিং এর কাজকে ব্যবসা কেন্দ্রিক গড়ে তুলবেন সেক্ষেত্রে একটি কন্টেন্ট রাইটিং সার্ভিস প্রদানকারী এজেন্সি গড়ে তুলতে পারেন। যেখানে একাধিক কন্টেন্ট রাইটার থাকবে এবং আপনার কাজ হবে বিভিন্ন স্থানে ক্লাইয়েন্টের সাথে যোগাযোগ করে কাজ হাতে নেয়া এবং এজেন্সিতে কাজ করা কন্টেন্ট রাইটারদের মাধ্যমে কাজ করিয়ে নেয়া, পাশাপাশি নিজেও কাজ করা। আর এভাবেই এখান থেকে আয় করতে পারবেন। 

কন্টেন্ট রাইটিং এর কাজ কোথায় খুজে পাওয়া যায়?

এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং জরুরি প্রশ্ন। আপনি এটা শিখে গেলেন যে, কন্টেন্ট রাইটিং কি এবং কন্টেন্ট রাইটিং করে আয় করা যায়। এবার স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন জাগতে পারে যে, “কাজ খুজে পাবো কোথায়?” Well, এই পর্যায়ে জানাচ্ছি সে বিষয়েই। 

ফেসবুক গ্রুপ 

ফেসবুককে আমরা সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বিবেচনা করলেও, যদি সঠিক ভাবে ব্যবহার করতে জানা যায় তবে এখান থেকেও আয়ের ব্যবস্থা চালু করা সম্ভব। যার জ্বলজ্যান্ত প্রমাণ এই যে, ফেসবুকে থাকা গ্রুপের মাধ্যমে কন্টেন্ট রাইটিং এর কাজ পাওয়া যায়। 

১) এক্ষেত্রে প্রথমেই আপনাকে এমন কিছু ফেসবুক গ্রুপ খুঁজে বের করতে হবে যেগুলোতে কন্টেন্ট রাইটিং বিষয়ক কথা বার্তা হয়ে থাকে। এই গ্রুপগুলোতে সাধারণত কন্টেন্ট রাইটারদের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়।

২) গ্রুপগুলোতে যোগ দেওয়ার পর আপনি বিজ্ঞপ্তিগুলো ভালো করে পড়ে দেখুন। বিজ্ঞপ্তিতে কাজের ধরন, বেতন, যোগ্যতা ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেওয়া থাকে।

৩) আপনার যোগ্যতা ও আগ্রহের সাথে মিলে এমন একটি বিজ্ঞপ্তি পেলে আপনি আবেদন করতে পারেন। আবেদন করার জন্য সাধারণত গ্রুপের পোস্টে কমেন্ট করে বা মেসেজ করে যোগাযোগ করতে হয়।

অতঃপর, যোগাযোগের পর সেটা আনার জন্য সুবিধাজনক হলে কাজ শুরু করে দিতে পারেন। 

ফেসবুক জব 

আপনি খেয়াল করে দেখবেন যে, ফেসবুকে এখন জব অপশন রয়েছে। আপনি এখানে গেলে দেখতে পারবেন অসংখ্য জব পোস্টিং, যেখানে আপনি কন্টেন্ট রাইটার এর জব ও খুজে পাবেন। সেখান থেকে এপ্লাই করে ও নিজের কাজের ডেমো দেখিয়েও কোম্পানি কিংবা ব্যক্তিগত পর্যায়ে জব পেতে পারেন। 

চাকরির পোর্টাল 

বিভিন্ন ধরনের পার্ট টাইম ও ফুল টাইম কন্টেন্ট রাইটিং জবের জন্য বিভিন্ন ধরনের চাকরির পোর্টাল গুলোতে চোখ রাখুন। বাংলাদেশে বর্তমানে অসংখ্য জব পোর্টাল সাইট রয়েছে এবং সেখানে কন্টেন্ট রাইটার চাওয়া সংক্রান্ত অনেক জব পোস্ট করা রয়েছে। সেগুলো চেকআউট করুন। ভিজিট করুন নিম্মে উল্লেখ্যিত সাইট গুলোতে। 

বাংলাদেশে কন্টেন্ট রাইটিং কাজের জন্য সেরা কিছু চাকরির পোর্টাল সাইট হল:

  • BDJobs.com: Bangladesh’s largest job portal 
  • Job.com.bd: Another popular job portal with over 1 million registered users.
  • Chakri.com: A popular job portal for IT professionals offering various IT jobs.
  • Jobable: A popular job portal for marketing and communications professionals.
  • JobHop: A popular job portal for finance and accounting professionals.

ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্ম 

তাছাড়া আপনি যদি কন্টেন্ট রাইটার হিসেবে চাকরি পাওয়ার জন্য কিছু জনপ্রিয় অনলাইন মার্কেটপ্লেস ও চাকরির ওয়েবসাইট খুজে থাকেন তবে এই সাইট গুলো আপনার জন্য:

  • Upwork
  • Fiverr
  • Freelancer
  • PeoplePerHour
  • Guru
  • Toptal
  • FlexJobs
  • Indeed
  • Monster

কন্টেন্ট রাইটিং করে আনুমানিক কত টাকা আয় করা যায়? 

সাধারণভাবে, একজন কন্টেন্ট রাইটার প্রতি ১০০০ শব্দের জন্য ৫০০-১০০০ টাকা আয় করতে পারে। তবে, কিছু ক্ষেত্রে এই পরিমাণ আরও বেশি হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনও কন্টেন্ট রাইটার বিশেষজ্ঞ বিষয়ে লেখে বা তার ভালো লেখার দক্ষতা থাকে, তাহলে সে প্রতি ১০০০ শব্দের জন্য ১৫০০-২০০০ টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারে।

বাংলাদেশে, কন্টেন্ট রাইটিং করে মাসে ১০-২০ হাজার টাকা আয় করা মোটামুটি সম্ভব। তবে, অভিজ্ঞ ও দক্ষ কন্টেন্ট রাইটাররা মাসে ৫০-১০০ হাজার টাকা বা তারও বেশি আয় করতে পারে।

আবার দেখা গিয়েছে যে, ভাষাগত পরিবর্তনের উপরেও প্রাইজিং এর উঠা নামা হয়ে থাকে। আপনি যদি বাংলা কন্টেন্ট রাইটার হোন তবে আপনি তুলনামূলক কম পেমেন্ট পাবেন ইংরেজি কন্টেন্ট রাইটার থেকে। 

কন্টেন্ট রাইটিং করে আয়ের জন্য, একজন কন্টেন্ট রাইটারকে অবশ্যই ভালো লেখার দক্ষতা থাকতে হবে। এছাড়াও, তাকে বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান থাকতে হবে এবং তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের দক্ষতা থাকতে হবে।

পরিশেষে কিছু কথা 

ঠিক জেনে নিলেন সব তথ্য কন্টেন্ট রাইটিং বিষয়ক। জেনেছেন কন্টেন্ট রাইটিং কি, এর প্রকারভেদ, কন্টেন্ট রাইটার হতে হলে প্রয়োজনীয় দক্ষতা, কিভাবে শিখবেন, কোথায় কাজ পাবেন,কত টাকা ইনকাম করবেন সহ বিভিন্ন তথ্য। আশা করি কন্টেন্ট রাইটিং বিষয়ক আপনার যে প্রশ্ন গুলো মনে ছিলো সেগুলো আর নেই। আর যদি থেকে থাকে কমেন্টে জানাবেন সেই বিষয়ে নতুন করে আবার জানিয়ে দিবো। ততক্ষন অব্দি সঙ্গে থাকুন Online Taka Income ওয়েবসাইটের এবং জানতে থাকুন অনলাইনে আয় করার মহা কৌশল গুলো সম্পর্কে। ধন্যবাদ।