কিভাবে ফরেক্স ট্রেডিং করে আয় করবেন? ফরেক্স ট্রেডিং পার্ট ২ 

Salim Mahamud

Updated on:

কিভাবে ফরেক্স ট্রেডিং করে আয় করবেন ফরেক্স ট্রেডিং পার্ট ২
কিভাবে ফরেক্স ট্রেডিং করে আয় করবেন ফরেক্স ট্রেডিং পার্ট ২

কিভাবে ফরেক্স ট্রেডিং করে আয় করবেন? ফরেক্স ট্রেডিং পার্ট ২ 

প্রথম পর্বে আমরা ফরেক্স ট্রেডিং সম্পর্কে জেনেছি। জেনেছি ফরেক্স মানে কি, কারেন্সির সাথে সম্পর্ক, ফরেক্স ট্রেডিং এর সুবিধা, মার্কেটের পরিধি এবং মার্কেটের স্ট্রাকচার সহ বেসিক পর্যায়ে সকল তথ্য। ফরেক্স ট্রেডিং সংক্রান্ত ২য় পার্টে আমরা জানবো “কিভাবে ফরেক্স ট্রেডিং করে আয় করবেন?” তাহলে চলুন আর কথা না বাড়িয়ে শুরু করা যাক ফরেক্স ট্রেডিং এর দ্বিতীয় পার্ট। 

ফরেক্স ট্রেডিং এর মাধ্যমে আয় করার ক্যালকুলেশন

স্বাভাবিকভাবে আপনি ফরেক্স মার্কেটে কারেন্সি কেনাবেচা করবেন। এক্ষেত্রে আপনার চিন্তা এমন যে আপনি এখানে কেনাবেচা করবেন এবং কারেন্সির মূল্য বাড়বে কিংবা কমবে। এবং এই বৃদ্ধি কিংবা কমার মধ্যে হিসেব মিলিয়ে ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে আপনি আয় করবেন। এবার চলুন একটি হিসাব করে নেয়া যাক.. 

ধরে নেই যে, 

আপনি €১০০ ইউরো ক্রয় করতে চাচ্ছেন $ ডলারের বিনিময়ে। 

এক্ষেত্রে, €১ = $১.০৭ 

তাহলে €১০০ = $১০৬.৬৪ ডলার প্রয়োজন হবে।  

ধরে নিচ্ছি আগামী একমাস পর প্রতি ইউরোর দাম বৃদ্ধি পেয়ে হলো $১.২০। তাহলে আপনার মোট লাভ হলো: ($১.২০X১০০) = $১২০ ডলার। 

আপনি বিনিয়োগ করেছিলেন ১০৬.৬৪ ডলার আর এখন হলো ১২০ ডলার। তাহলে মোট লাভ হলো $১৩.৩৬ ডলার। যা বাংলাদেশি টাকায় বর্তমানে ১৪৬৯ টাকা। 

আশা করি খুব সহজ অঙ্গে তারা বোঝাতে পেরেছি আপনি ফরেক্স ট্রেডিং করে কিভাবে কত টাকা আয় করতে পারবেন সে বিষয়ে।  এবার প্রশ্ন হচ্ছে ফর এক্সে কারেন্সি মূল্য কিভাবে পড়বো? 

 কারেন্সি মূল্য সব সময় জড়ায় গণনা করতে হয়, কেননা আপনি একটি কারেন্সি কিনেছেন মানে অন্য একটি কারেন্সি বিক্রি করতে হচ্ছে।এখানে কই বিক্রয় করার ক্ষেত্রে দুইটি কারেন্সির মধ্যে একটি হল কোট কারেন্সি অন্যটি হলো বেস কারেন্সি। 

মনে রাখতে হবে, আপনি তখনই কিনবেন যখন দেখবেন বেস কারেন্সির মূল্য বৃদ্ধি পাবে। অপরদিকে আপনি তখনই বিক্রি করবেন যখন দেখবেন বেস কারেন্সির মূল্য কমবে। 

বেস কারেন্সির মূল্য বৃদ্ধি = ক্রয় 

বেস কারেন্সির মূল্য হ্রাস = বিক্রয় 

Long এবং Short এর নিয়ম

প্রথমে আপনাকে নির্ধারণ করতে হবে যে আপনি কারেন্সি ক্রয় করতে চান নাকি বিক্রয়। আপনি যদি কারেন্সি ক্রয় করতে চান সে ক্ষেত্রে আপনি এই চিন্তা করছেন যে কারেন্সির ভ্যালু বাড়বে। এবং এটাকে বলা হয় Long। অন্যদিকে আপনি যদি কারেন্সি বিক্রয় করতে চান তাহলে আপনি চিন্তা করছেন যে কারেন্সির ভ্যালু কমবে। এবং এটাকে বলা হবে Short। 

এক্ষেত্রে হিসাব, 

Long = Buy 

Short = Sell 

যেকোনো কারেন্সি কেয়ারে দুইটি প্রাইস দেওয়া থাকবে. প্রথমটি থাকবে Bid এবং পরেরটি থাকবে Ask । উল্লেখ্য যে Bid প্রাইসের ভ্যালু সব সময় Ask প্রাইজ এর চেয়ে কম থাকবে। 

Bid – Ask = Spread 

স্পিরিট হল ব্রোকারের লভ্যাংশ যা আপনার ট্রেডের ভেতর থেকে কেটে নেওয়া হয়। লক্ষ্য করবেন যে আপনি যখন Buy অর্ডার দেন তখন ট্রেড Ask মূল্যে শুরু হয়। আর যখন Sell অর্ডার দেন তখন ট্রেড Bid মূল্যে শুরু হয়।

তাছাড়া আপনার ট্রেড কিছুটা লস দিয়ে শুরু হয়েছে কেননা এখানে ব্রোকার আপনার ট্রেড থেকে স্প্রেড কেটে নিয়েছে এবং মনে রাখতে হবে যে সব কারেন্সি স্প্রেড সমান নয়। 

মার্জিন ট্রেডিং (Margin Trading)

ধরে নেয়া যাক আপনি দোকানে গেলে চিপস কিনতে। এক্ষেত্রে আপনাকে কিন্তু এক প্যাকেট সম্পূর্ণ চিপস কিনতে হবে সে প্যাকেট খুলে আপনাকে এক পিস চিপস বিক্রি করবে না বা আপনি সেটা কিনবেন না। 

ফরেক্সে, এটা বোকামীর কাজ হবে, যদি ১ ইউরো সেল (বিক্রয়) অথবা বাই (ক্রয়) করেন। তাই ফরেক্সে লট হিসেবে বাই-সেল করা হয়ে থাকে। যেমন ১,০০০ ইউনিট মুদ্রা (মাইক্রো), ১০,০০০ ইউনিট (মিনি) অথবা ১০০,০০০ ইউনিট (স্ট্যান্ডার্ড) লট হিসেব করে ট্রেড করবেন। 

আগে আমরা দেখেছিলাম যে, আমাদের প্রচুর অর্থের প্রয়োজন ট্রেড করার জন্য যা জোগাড় করা আমাদের অধিকাংশের সাধ্যের বাইরে। ভাবছেন তাহলে কিভাবে ট্রেড করবেন?

Well, মার্জিন ট্রেডিং ব্যাপারটা থাকার কারণে আপনাকে এত টেনশন করতে হবে না। 

মার্জিন ট্রেডিং বলতে সাধারণত মুলধন ধার করাকে বুঝায়। মার্জিনের সুবিধার কারনে আপনি মাএ $১০০ অথবা $১,০০০ দিয়ে $১০০,০০০ সমপরিমানের ট্রেড পরিচালনা করতে পারবেন। এটা কিভাবে সম্ভব?

নিম্মের কথা গুলো লক্ষ্য করুন: 

১) আপনি চিন্তা করছেন যে, ব্রিট্রিশ পাউন্ড US ডলারের বিপরীতে বৃদ্ধি পাবে। 

ধরুন GBP/USD এর মূল্য ১.৫০০০

২) আপনি ১ মিনি লট (মানে ১০,০০০ GBP) কিনবেন। 

তাহলে আপনার $১৫,০০০ লাগবে।

যদি আপনার ট্রেড ওপেন করতে ১% মার্জিন এর প্রয়োজন হয়, 

তাহলে আপনার লাগছে $১৫,০০০ X ১% = $১৫০।

৩) ধরুন আপনার ভবিষ্যৎ বানী সত্য হল আর আপনি এখন লাভ নিবেন। 

তাহলে এবার ধরুন আপনি আপনার ট্রেডটা ১.৫১০০ তে ক্লোজ করলেন।

এখানে আপনি কি কি করলেন?GBPUSD
প্রথমে ১০,০০০ পাউন্ড কিনলেন ১.৫০০০ এক্সচেনজ রেটে+১০,০০০-১৫,০০০
প্রাইস ১.৫১০০ তে গেলে আপনি ট্রেড ক্লোজ করলেন।-১০,০০০+১৫,১০০
আপনার লাভ১০০

আপনি ট্রেড ক্লোজ করার পর যে পরিমান অর্থ আপনার মার্জিনে আটকে ছিল লাভ-লোকসান গননা করার পর আপনার একাউন্টে দেখতে পারবেন। উপরের উদাহরনের ক্ষেএে $১০০ আপনার একাউন্টে যোগ হবে।

রোলওভার (Rollover)

ফরেক্স ট্রেডিং এর রোলওভার হল একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে একটি ফরেক্স ট্রেডের মেয়াদ শেষ হলে তা নতুন করে খোলা হয়। ফরেক্স ট্রেডের মেয়াদ সাধারণত দিনে একবার হয়, মধ্যরাতের সময়। যখন একটি ট্রেডের মেয়াদ শেষ হয়, তখন তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যায় এবং ট্রেডারের ব্রোকার নতুন করে একটি ট্রেড খুলে দেয়। এই নতুন ট্রেডের মূল্য আগের ট্রেডের মূল্য থেকে সামান্য পরিবর্তিত হতে পারে। এই পরিবর্তনটি হল রোলওভার খরচ।

রোলওভার খরচ হল একটি সুদ-সদৃশ খরচ যা ট্রেডারের ব্রোকার চার্জ করে। এই খরচটি সাধারণত ট্রেডের মেয়াদ, ট্রেডের পরিমাণ এবং মুদ্রার জোড়ার উপর নির্ভর করে। রোলওভার খরচ ট্রেডারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই খরচটি ট্রেডের লাভ বা ক্ষতির উপর প্রভাব ফেলতে পারে।

মূল বিষয় হচ্ছে যদি ট্রেড পরের দিন পর্যন্ত খোলা রাখেন তাহলে ব্রোকার আপনার সেই ট্রেডের উপর হয় সুদ দিবে নয়ত সুদ কাটবে। যদি সুদ না খেতে চান তাহলে হয় ট্রেড দিন শেষ হবার আগে ক্লোজ করে দেন, নয়ত “Swap Free” একাউন্ট ব্যাবহার করুন।

সুতরাং, এই ছিলো ওভারল পদ্ধতি যে পদ্ধতিতে ফরেক্স ট্রেডিং করে আয় করবেন। এক্ষেত্রে একটা বিষয় বলে রাখা ভাল যে, এটা স্রেফ একটা থিম। এই থিমের উপরেই মূলত ফরেক্স ট্রেডিং এর ওভারল বিষয় গুলো উপস্থাপন হবে। এখনও জানার রয়েছে অনেক কিছু বাকি, বুঝার রয়েছে অনেক মারপ্যাঁচ। এই সিরিজের পরবর্তী ধাপে খুব গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি শব্দ ও সেগুলোর ব্যবহার সম্পর্কে জানবো। 

ফরেক্স ট্রেডিং সংক্রান্ত টিউটরিয়ালটির সকল পার্ট পড়ুন এখানে ক্লিক করে