অনলাইনে ইনকাম করার উপায় || সেক্টর ভিত্তিক ১০টি আইডিয়া

Salim Mahamud

অনলাইনে ইনকাম করার উপায় || সেক্টর ভিত্তিক ১০টি আইডিয়া
অনলাইনে ইনকাম করার উপায় || সেক্টর ভিত্তিক ১০টি আইডিয়া

অনলাইনে ইনকাম করার উপায় || সেক্টর ভিত্তিক ১০টি আইডিয়া

দিন যত আপডেট হচ্ছে অনলাইনে মানুষের আকর্ষণ ও ঝুকে যাওয়ার প্রবনতা বাড়ছে। একটা সময় তো এমন ছিলো যখন মানুষ ঘরে বসে থেকে ইনকাম করত পারবে এই ব্যাপারটা ভাবতেই পারতো না, অথচ এখন এমন হাজারো কাজ আছে যেগুলো করার জন্য ঘরের বাইরে যেতে হয় না। ইন্টারনেট থাকা সাপেক্ষে ঘরে বসে অনলাইনে ইনকাম করা যায়। তবে অনেকের মনে এই প্রশ্ন থাকে যে, প্রতিনিয়তই তো আয়ের নিত্যনতুন সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে তাহলে ২০২৪ এ এসে আপটুডেট অনলাইনে ইনকাম করার উপায় গুলো কি? 

এবারের আর্টিকেলটিতে গতানুগতিক অনলাইনে ইনকাম করার উপায় সম্পর্কে আলোকপাত করে আপনার মূল্যবান সময় নষ্ট করবো না, এখানে জানাবো প্রকৃতপক্ষে কার্যকর ও ২০২৪ এ এসে স্মার্টলি ইনকাম করা যায় এমন কিছু আইডিয়া সম্পর্কে। এই উপায় গুলোর মধ্যে কোনো একটি নিয়েই আপনি শুরু করতে পারেন আপনার পথযাত্রা। 

১০টি অনলাইনে ইনকাম করার উপায় ২০২৪

অনলাইনে ইনকাম করার অনেক গুলোই উপায় রেখেছে। এগুলোর সব এক আর্টিকেলে বলা আদৌও সম্ভব নয়, তবে ক্যাটাগরি ভিত্তিক কিছু ধরণ বলে দিলে সেই ক্যাটাগরি অনুসরণ করে আরো বিস্তারিত ভাবে প্রতিটি সেক্টর সম্পর্কে জানা সম্ভব। এক্ষেত্রে কিছু ক্যাটাগরি হতে পারে এমন যে… 

ওয়েবসাইট ভিত্তিক কাজ করে অনলাইনে ইনকাম করার উপায় 

ব্লগিং করে আয় 

ব্লগ ও ব্লগিং কি সে বিষয়ে ইতিমধ্যেই একটা পৃথক আর্টিকেল লিখেছি এটা পড়লে খুব ভালো ভাবে এই বিষয়ে জানতে পারবেন তবে এখানে বলার জন্য বলছি যে, ব্লগিং হলো ব্যক্তিগত জ্ঞানের আলোকে কোনো বিষয়ে তথ্য শেয়ার করা। এক্ষেত্রে লোকেরা তাদের দক্ষতার নিশ (বিষয়) বাছাই করে সে বিষয়ে বিস্তারিত সকল খুঁটিনাটি লিখে থাকে।

আর এই কাজটি করে ইনকাম করা যায়। এক্ষেত্রে একটি ব্লগ সাইট তৈরি করতে হয়, সেটাকে কাস্টমাইজ ও সেটাপ করতে হয়। নিয়মিত আর্টিকেল পাবলিস্ট করতে হয়। একটা সময় পরে এড নেটওয়ার্কের রিকোয়ার্মেন্ট ফুলফিল হলে এড দেখানোর মাধ্যমে ব্লগ সাইট থেকে ইনকাম করা যায়। 

ওয়েবসাইট ক্রয় বিক্রয় করে আয় 

অনেকেই আছে যারা ব্লগিং করে প্যাসিভ ইনকাম করতে চায় না, তাদের প্রয়োজন এক্টিভ ইনকাম। এক্ষেত্রে তারা আরেকটা কাজ করে আর সেটা হলো ওয়েবসাইট তৈরি করে সেটাকে বিক্রি করে দেয়। এখানে অনেক বড় একটা মার্কেট রয়েছে। আর ওয়েবসাইট বিক্রির ধরণেও রয়েছে বিস্তর পার্থক্য। খুলে বলি ধরণ গুলো: 

১) সার্ভিস ওয়েবসাইট বিক্রি: এক্ষেত্রে কোনো এজেন্সির জন্য ওয়েবসাইট তৈরি করে দেয়া হয়। 

২) এডসেন্স এপ্রুভ ওয়েবসাইট বিক্রি: গুগল এডসেন্স দ্বারা মনিটাইজড ওয়েবসাইট বিক্রি করা হয় যেখানে ওয়েবসাইটে কন্টেন্টে বিজ্ঞাপন দেখানো হয়। 

৩) পিন ভেরিফাই এডসেন্স একাউন্ট বিক্রি ও পেমেন্ট রিসিভড এডসেন্স একাউন্ট সহীত ওয়েবসাইট বিক্রি। এই সকল ওয়েবসাইটের দামও ভিন্ন ভিন্ন হয় বিভিন্ন ক্রাইটেরিয়া অনুসরণ করে। যেমন –

  • ফ্রেস এডসেন্স এপ্রুভাল ওয়েবসাইটের দাম ১৫ – ২৫ হাজার টাকা 
  • পিন ভেরিফাই ওয়েবসাইটের দাম ৩৫ – ৪৫ হাজার টাকা 
  • পেমেন্ট রিসিভড ওয়েবসাইটের দাম ৫০ – ৭০ হাজার টাকা 

তাছাড়া ওয়েবসাইটের ট্রাফিকের উপরেও প্রাইজ উঠা নামা নির্ভর করে। 

প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করে অনলাইনে ইনকাম করার উপায় 

ই-কমার্স ওয়েবসাইট থেকে আয় 

আপনি যদি লং বাজেটে খেলতে চান তবে ই-কমার্সের মাধ্যমে শুরু করতে পারেন আপনার অনলাইনে ইনকাম করার জার্নি। আপনার যদি কোনো নিজস্ব প্রোডাক্ট থাকে এবং আপনি চাচ্ছেন সেটা অনলাইনে সেল করে টাকা ইনকাম করতে। এক্ষেত্রে আপনার প্রয়োজন হবে একটা ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম যেখানে আপনার প্রোডাক্ট লিস্টিং এবং সেখান থেকে বিক্রি করতে পারবেন। 

এক্ষেত্রে আপনি দুইটা পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেন। ১) existing e-commerce প্ল্যাটফর্মে ভার্চুয়াল শপ ওপেন করে সেখানে প্রোডাক্ট সেল করা যেমন দারাজ। ২) নিজস্ব ই-কমার্স ওয়েবসাইট বিল্ডাপ করা এবং নিজের ব্র্যান্ডকেই একান্ত ভাবে প্রোমোট করা ও প্রোডাক্ট সেল করা। ২য় স্টেপ কিছুটা খরচার হলেও পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং এর জন্য কার্যকর। 

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে আয় 

আপনার নিজস্ব কোনো প্রোডাক্ট নেই, কিন্তু প্রোডাক্ট সেলিং এ আপনার রয়েছে বেশ দক্ষতা, কোনো কিছু কেনাতে আপনার ট্যালেন্ট ব্যবহার করুন। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর মাধ্যমে অন্যের প্রোডাক্ট বিক্রি করে নিজে অনলাইনে টাকা ইনকাম করার উপায় তৈরি করুন। 

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর মধ্যে আপনি কোনো এক প্রোডাক্ট কিংবা সার্ভিস সম্পর্কে জানান দেয়ার মাধ্যমে মার্কেটিং করেন। এবং কেউ যদি আপনার শরণাপন্ন হয়ে আপনার প্রোভাইড করা লিংক থেকে প্রোডাক্ট ক্রয় করে তবে আপনি পাবেন নিদিষ্ট পরিমাণের কমিশন। 

এই কমিশন পেতে আপনাকে প্রোডাক্ট এর রিভিউ করে সেটাকে অনলাইনে বিভিন্ন স্থানে পেশ করতে হবে। যারাই এই প্রোডাক্টে আগ্রহী তারা আপনার প্রোভাইড করা লিংক থেকে পণ্য কিনবে আর এতেই আপনার উদ্দেশ্য সফল হবে। প্রায় সব ধরণের প্রোডাক্ট ও সার্ভিসেরই আজকাল অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম পাওয়া যায়। বাংলাদেশে দারাজেও আপনি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার হিসেবে যুক্ত হতে পারেন। 

ড্রপশিপিং করে আয় 

আবারো, আপনার কাছে কিংবা নিজস্ব প্রোডাক্ট নেই। কিন্তু কাজ করতে চাচ্ছেন প্রোডাক্ট নিয়েই। তবে আরেকটা সুন্দর সুযোগ রয়েছে এখানে এটার নাম হলো ড্রপশিপিং। অনেকটা অ্যাফিলিয়েটের মত মনে হলেও আসলে তেমন না। এখানে আপনি কমিশন ভিত্তিক প্রতি প্রোডাক্টে কয়েক % কমিশন পাবেন না। আপনি সরাসরি প্রোডাক্টের দাম এর সাথে আপানার লাভের পরিমাণ বসিয়ে যেকোনো দামে কাস্টমারের কাছে বিক্রি করতে পারেন। 

মজার ব্যাপার হলো কাস্টমার এটা জানবেও না যে আপনি নিজের মুনাফাও এড করে রেখেছেন কিংবা প্রোডাক্টটি আপনারই না। ড্রপশিপিং কাজ এভাবে করে যে, আপনি কোনো এক কোম্পানির সাথে যুক্তিবদ্ধ হলেন যে আপনি তাদের কাস্টমার এনে দিবেন। আপনি তাদের প্রোডাক্টের ছবি, নাম ও দাম কালেক্ট করে নিজের মত করে ব্যবসায়ীক কর্মকান্ড চালাবেন। 

যখন কোনো কাস্টমার পেয়ে যাবেন আপনি সেই কাস্টমারের তথ্য ওই কোম্পানির কাছে পৌছে দিবেন, কোম্পানি সঠিক ভাবে ঐ কাস্টমারের কাছে প্রোডাক্ট পৌছে দিবে। এভাবে আপনি প্রোডাক্ট হাতে না ধরে না ছুয়ে ব্যবসা করে ফেলতে পারবেন। 

অনলাইনে সার্ভিস প্রদান করে ইনকাম করার উপায় 

ডিজিটাল মার্কেটিং সার্ভিস 

বর্তমান সময় প্রোডাক্ট থেকে শুরু করে সার্ভিস কিংবা যেকোনো ধরণের প্রমোশনের ক্ষেত্রে ডিজিটাল মার্কেটিং এর বিস্তার রয়েছে। ডিজিটাল মার্কেটিংকে একটা বিশাল সেক্টর হিসেবে বিবেচনা করা যেতেই পারে কেননা এখানে মোট যত গুলো বিষয় রয়েছে তার প্রতিটিকে কেন্দ্র করেই একেকটা ক্যারিয়ার করে তোলা হয়। এই যেমন সোশ্যাল মিডিয়া এক্সপার্ট, গুগল এডস এক্সপার্ট, এসইও, ইমেইল মার্কেটিং সহ আরো অনেক কিছু।

এই বিশাল মার্কেটে বিভিন্ন ধরণের সেবা দিয়ে ইনকাম করার সুযোগ থাকছে। অনলাউনে ইনকাম করার উপায় হিসেবে এটা সেরা মাধ্যম। বিভিন্ন ফ্রিন্যান্স মার্কেটপ্লেস থেকে শুরু করে জব, এজেন্সিসহ বিভিন্ন ভাবে কাজের সুযোগ থাকছে এখানে। 

কন্টেন্ট রাইটিং করে আয়

বলা হয়ে থাকে কন্টেন্ট ইজ কিং, আসলেই তাই। আপনি যেকোনো সেক্টর বিবেচনা করে থাকে না কেন, কন্টেন্ট আপনার প্রয়োজন হবেই আর যেখানে কন্টেন্ট এর প্রয়োজন সেখানেই কন্টেন্ট রাইটারের চাহিদা উঠে আসবে। হ্যাঁ, বর্তমানে Chat GPT, Gemini সহ আরো অনেক AI টুলস এসেছে যেখানে সহজেই যেকোনো বিষয়ের তথ্য সহ যেকোনো রাইটিং সুবিধা পাওয়া যায় তবে Nothing can bit human writing. 

এই যে আপনি এখন আমার লিখাটি পড়ছেন, যেভাবে বুঝতে পারছেন কিংনা যে কনফর্ম অনুভব করছেন তা আপনি AI কন্টেন্টে পেতেন না। তা যাই হোক, বলছিলাম কন্টেন্ট রাইটিং এর বিষয়ে। কন্টেন্ট রাইটিং বলতে অনেকেই আছে যারা ভাবে কেবল আর্টিকেল লিখাই হয়তো কন্টেন্ট রাইটিং এর সবকিছু। আসলে তা কিন্তু নয়, এখানেও রয়েছে বিস্তর বিষয়। 

কপি রাইটিং, স্কিপ রাইটিং, একাডেমিক রাইটিং, প্রেস রাইটিং, নিউজ রাইটিং, রিপোর্ট রাইটিং, টেকনিক্যাল রাইটিং সহ এমন আরো অনেক সেক্টর রয়েছে এখানে। আর প্রতিটি সেক্টরেই হাই ডিমান্ডও রয়েছে। তাই আপনি যদি এখানে ভালো হয়ে থাকেন তবে কন্টেন্ট রাইটিং করেও অনলাইনে ভালো পরিমাণের অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। 

ভিডিও ইডিটিং সার্ভিস 

বর্তমান যুগে ভিডিওর মাধ্যমে বার্তা প্রদানের প্রবনতা যেমন বেড়েছে, ভিডিও কন্টেন্ট তৈরির পর সেটাকে সঠিক নিয়মে আকর্ষণীয় ভাবে ইডিট করার চাহিদাও কিন্তু দেখা যাচ্ছে। কার থেকে কে এগিয়ে থাকবে দর্শকের দৃষ্টিতে সে নিয়ে বেশ মাতামাতিও হয়। 

ভিডিও কন্টেন্টের জেনারেশনে ভিডিও ইডিটিং সার্ভিস যেনো সময় উপযোগি সার্ভিস। এখান থেকে আপনি প্রচুর পরিমাণ ইনকাম জেনারেট করতে পারবেন। বিশেষ করে প্রতিটা ইউটিউবারের এক বা একাধিক ভিডিও ইডিটর রয়েছে, নিত্যনতুন এতো এতো ভিডিও সেগুলোর ইডিট করার জন্য অনেক দক্ষ লোকবল এর চাহিদা সব সময়ই থাকে, যা বুঝা যায় ফাইবার, আপওয়ার্ক, ফ্রিল্যান্সার এর মত ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেস গুলো দেখলেই। আর এটাকে ধরা হয় মোস্ট হাইলি পে করা সার্ভিস গুলোর মধ্যে একটি। 

গ্রাফিক্স ডিজাইনিং সার্ভিস 

গ্রাফিক্যাল দুনিয়ায় আপনাকে স্বাগতম, দিন যতই বাড়বে গ্র্যাফিক্যাল জিনিস পত্র তত বেশি চোখে পড়বে। গ্রাফিক্স ডিজাইনিং হলো মোস্ট ডিমান্ডিং সার্ভিস বর্তমান সময়ে। কোন সেক্টরে গ্রাফিক্সের প্রয়োজন হয় না? লোগো ডিজাইন, ইনফোগ্রাফিক্স, পোস্টার ডিজাইন, টিশার্ট ডিজাইন, ইউটিউব থাম্বেল সহ প্রায় সব সেক্টরেই গ্রাফিক্স ডিজাইনারের প্রয়োজন আছে। 

ফ্রিল্যান্সিং, জব, এজেন্সি সহ বিভিন্ন ভাবে গ্রাফিক্স ডিজাইনিং এর কাজ পাওয়া যায় আর অনেক বেশি পরিমাণ আয় করা যায়। অনলাইনে ইনকাম করার উপায় হিসেবে গ্রাফিক্স ডিজাইন মোটেও পিছিয়ে নেই বরং অনেক সেক্টর থেকে বেশ এগিয়েই রয়েছে। 

SAAS প্রোডাক্ট থেকে আয় 

SAAS মানে হলো  Software as a Service. যার অর্থ হলো একটা সফটওয়্যার যেটাকে সার্ভিস হিসেবে গণ্য করে লোকেদের সমস্যার সমাধান ও এর মাধ্যমে সাবস্ক্রিপশন দ্বারা রেভিনিউ জেনারেট করা হয়। রেস্টুরেন্ট থেকে শুরু করে যেকোনো কোম্পানিতে বিভিন্ন কাজে SAAS চলে আসছে। 

এখন এমন অনেক কাজই রয়েছে যা চলছে অটোমেশনে, যেখানে অনেকাংশেই পরিশ্রম ও সময় বেছে যাচ্ছে। আপনি যদি সফটওয়্যার নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী হোন, কিংবা নিজের একটা সাস প্রোডাক্ট তৈরি করতে পারেন তবে এটা নিশ্চিত ভাবে বলা যায় সেখান থেকে ভালো পরিমাণের আয় করতে পারবেন।

চুড়ান্ত মন্তব্য 

এই ছিলো এবারের মত কিছু অনলাইনে ইনকাম করার উপায় যেখানে কিছুটা ভিন্ন ধাচে নতুন কিছু তথ্য দেয়ার চেষ্টা করেছি। আশা করছি আর্টিকেলটির মাধ্যমে এই সকল বিষয়ে ব্যাসিক আইডিয়াটা পেয়েছেন এবং এর মধ্যে প্রতিটি বিষয় সম্পর্কে আরো এডভান্স ভাবে জানতে, বুজতে ও শিখতে Online Taka Income সাইটে ভিজিট করুন।